
বদলে যাওয়া করোনাভাইরাসটি আরোও দ্রুত ছড়ায় : কোভিড-১৯ গবেষণা
গত বছরের ডিসেম্বরে দুনিয়া কাঁপানো ভাইরাসটি উৎপন্ন হয়েছিল চীনের উহানে। শুরুতেই বলা যায়নি মুলত এটি কি। শুধু বলা হয়েছিল ভয়াবহ হতে পারে এই ভাইরাসটি। পরবতীতে জানা যায় ভাইরাসটির নাম করোনা ভাইরাস যখন আস্তে আস্তে এটি ছড়িয়ে যায়। এই ভাইরাসটি যখন এশিয়ার দেশ চীন সীমান্ত পার হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকাতে চলে আসে তখন বিজ্ঞানীরা এর জিন সিকোয়েন্সিং করে তার না দেন, ডি৬১৪।
কিন্তু পরে এটি ছড়িয়ে পড়তে পড়তে নিজের গঠন ও চরিত্রে কিছু পরিবর্তন সাধন করে, বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় রূপান্তর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ থেকে মানুষের সংক্রমণনর সময় একেক অঞ্চলে এই ভাইরাসটি একেক ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে।
দ্রুত ছড়ায়
আন্তর্জাতিক এক গবেষনায় দেখা গেছে বর্তমানের করোনাভাইরাসটি আসল ভাইরাসটির চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক।
অর্থাৎ শুরুতে এই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে যতোটা সংক্রমিত হতো, রূপান্তরের পর বর্তমান ভাইরাসটি তার চেয়েও বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। তবে এটি আসল ভােইরাসের চেয়ে মানুষকে আরো বেশি অসুস্থ করে দেয় কীনা সে বিষয়ে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোর জিন বিন্যাসের মাধ্যমে এই গবেষনা পরিচালিত হয়েছে যার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী “সেলে” গত সপ্তাহে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই গবেষনাটি চালিয়েছে। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন একজন বিজ্ঞানী এরিকা ওলমান মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, এই করোনাভাইরাসটি এখন প্রাধান্য বিস্তার করছে। এটাই এখন করোনাভাইরাস।
করোনাভাইরাসের রূপান্তরের বিষয়ে বিজ্ঞানীদের এই দলটি আগেও গবেষনা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
কারণ কী?
জিন বিন্যাসের সাথে সাথে বিজ্ঞানীরা এখন পরীক্ষাগারে মানুষ ও প্রাণীর কোষের উপরও পরীক্ষা চালিয়েছে এবং তাতে দেখা যাচ্ছে যে রূপান্তরিত ভাইরাসটি এখন আগের ভাইরাসের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন তারা জানতে পারছেন যে পরিবর্তিত ভাইরাসটি সংক্রমনের দিক থেকে আসল ভাইরাসের চেয়ে শক্তিশালী।
তারা বলেছেন যে করোনাভাইরাস কোন একটি কোষকে আক্রান্ত করার সময় তার ভেতরে ঢুকতে স্পাইক প্রোটিনের কাঠামো ব্যবহার করে থাকে এবং রূপান্তরের ফলে সেই কাঠামোতেও পরিবর্তন ঘটে।
গবেষকরা এখন পরীক্ষা করে দেখছেন টিকার সাহায্যে এই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর এই পরিবর্তনের কোন প্রভাব পড়ে কীনা।
বর্তমানে ভ্যকসিন উদ্ভাবনের লক্ষ্যে যেসব গবেষণা চলছে, তার বেশিরভাগই এই স্পাইক প্রোটিনকে টার্গেট করেই করা হচ্ছে।
কীভাবে ছড়ায়
গবেসণায় দেখা গেছে ১লা মার্চ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের জি৬৪১ ধরনটি ইউরোপের বাইরে ছিলো বিরল। কিন্তু মার্চ মাসের পর সারা বিশ্বেই এর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত ধরনটির সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার ঘটে নাক, সাইনাস ও গলায়। এবং একারণেই এটি খুব সহজে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, রূপান্তরিত ভাইরাসটির দ্রুত ও বেশি মাত্রায় বেড়ে ওঠার কারণে, এটিকে নির্মুল করতে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে আরো সক্রিয় হতে হবে।
তবে এই ভাইরাসের যে আর রূপান্তর ঘটবে না তা নয়। এই পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে এর পরের ভাইরাসের সংক্রমণ শক্তি বর্তমান ভাইরাসটিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।